বাংলা চলচ্চিত্রে প্রতি বছরই কিছু সিনেমা আসে যেগুলো দর্শকদের মধ্যে আগ্রহের ঝড় তোলে। ২০২৫ সালের এমনই একটি বহুল প্রতীক্ষিত মুভির নাম “তাণ্ডব”। নাম শুনেই বোঝা যায়—এটা কোনও সাধারণ সিনেমা নয়। এখানে আছে রাগ, প্রতিশোধ, শক্তি আর এক অনন্য অভিজ্ঞতা। চলুন, আজকের এই লেখায় খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করে দেখা যাক—এই সিনেমাটি আদৌ আপনার সময় এবং টাকাটা উপযুক্তভাবে ব্যবহার করতে পারবে কিনা।
🎞️ সিনেমার সারসংক্ষেপ
“তাণ্ডব” মূলত একজন নিপীড়িত ব্যক্তির জীবন থেকে শুরু হওয়া এক শক্তিশালী প্রতিশোধের গল্প। সমাজের অন্যায়, দুর্নীতি এবং ক্ষমতাবানের অত্যাচারের বিরুদ্ধে একটি একক মানুষের দাঁড়িয়ে যাওয়া—এই হলো গল্পের মূল আবেগ। এখানে আমরা দেখতে পাই, কীভাবে একজন নিরীহ মানুষ ধীরে ধীরে রূপ নেয় এক তীব্র প্রতিশোধপরায়ণ যোদ্ধায়।
তবে গল্পটা শুধু প্রতিশোধের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নয়। এখানে আছে পরিবার, বিশ্বাসঘাতকতা, ভালোবাসা আর আত্মত্যাগের ছোঁয়াও। এই মিশ্রণই সিনেমাটিকে সাধারণ মুভি থেকে একধাপ উপরে তুলেছে।
👤 অভিনয়
এই সিনেমার মূল আকর্ষণ নিঃসন্দেহে শাকিব খান। তিনি যে শুধু একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তা নয়, বরং পুরো চরিত্রকে নিজের মধ্যে ধারণ করেছেন। তার চোখের ভাষা, শরীরী ভাষা ও সংলাপ বলার স্টাইল—সবকিছু মিলে দর্শকদের মুগ্ধ করার জন্য যথেষ্ট।
সহ-অভিনেত্রী হিসেবে ছিলেন তানহা তাসনিয়া, যিনি খুবই সুন্দরভাবে তার চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছেন। তাদের রসায়ন দর্শকদের চোখে নতুন এক পর্দার যুগল উপহার দিয়েছে। অন্যদিকে ভিলেন চরিত্রে ছিলেন আফজাল হোসেন, যিনি তার দুর্দান্ত অভিব্যক্তি ও কণ্ঠ দিয়ে গল্পে তীব্রতা এনে দিয়েছেন।
🎥 পরিচালনা ও সিনেমাটোগ্রাফি
পরিচালক রাশেদ রাহা অসাধারণ কাজ করেছেন বলতে হবে। প্রতিটি দৃশ্যের ব্যাকগ্রাউন্ড, লাইটিং এবং সাউন্ড ডিজাইন এতটাই নিখুঁত ছিল যে, মনে হয়েছে আমরা বাস্তবেই ঘটনার মধ্যে ঢুকে পড়েছি। অ্যাকশন দৃশ্যগুলো ছিল আন্তর্জাতিক মানের—নকল নয়, বরং গল্পের সঙ্গে একীভূত এবং বাস্তবধর্মী।
🎶 মিউজিক ও ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর
সিনেমার গানগুলো বেশ কানে লেগে থাকার মতো। বিশেষ করে টাইটেল ট্র্যাক “তাণ্ডবের আগুন” অনেক আগে থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এই গানটির মধ্যে যে দৃঢ়তা ও তীব্রতা আছে, তা সিনেমার মূল আবেগের সঙ্গে একেবারেই মিলে গেছে।
ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ছিল উত্তেজনাপূর্ণ এবং আবেগঘন মুহূর্তগুলোকে আরও বেশি বাস্তব করে তুলেছে। বিশেষ করে যুদ্ধের দৃশ্যগুলোয় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দর্শকদের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে।
🗣️ সংলাপ ও আবেগ
সিনেমার সংলাপগুলো এমনভাবে লেখা হয়েছে, যা দর্শকের হৃদয়ে সরাসরি গিয়ে ধাক্কা দেয়। “বিচার যখন সময়মতো হয় না, তখন মানুষ বিচার নিজেই নিয়ে নেয়”—এমন কিছু ডায়লগ পুরো হলজুড়ে হাততালির ঝড় তুলেছে।
এছাড়া সিনেমার আবেগঘন মুহূর্তগুলো, বিশেষ করে মায়ের মৃত্যুর দৃশ্য কিংবা প্রেমিকার সাথে শেষ কথোপকথন—এইসব অংশগুলো চোখ ভিজিয়ে দিতে বাধ্য করে।
📈 সিনেমার সামাজিক প্রভাব ও বার্তা
“তাণ্ডব” কেবল একটি বিনোদনমূলক সিনেমা নয়। এটি সমাজের অনেক অসঙ্গতি তুলে ধরে। দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব, ক্ষমতার অপব্যবহার—এই বিষয়গুলো সিনেমায় সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এই সিনেমা আমাদের শেখায় যে, প্রতিটা মানুষের সহ্যের একটা সীমা আছে। আর যখন সেই সীমা পেরিয়ে যায়, তখনই শুরু হয় "তাণ্ডব"।
📢 আমার মতামত
যদি আপনি বাংলা সিনেমার একজন নিয়মিত দর্শক হয়ে থাকেন, কিংবা অনেকদিন পর হলে গিয়ে একটা সত্যিকারের শক্তিশালী গল্প দেখতে চান—তাহলে “তাণ্ডব” আপনার জন্যই। এই সিনেমা শুধু চোখ নয়, মনকেও ছুঁয়ে যায়।
তবে সিনেমাটিতে কিছু ধীর গতির অংশ ছিল, যেটা আরও টানটান করা যেত। কিন্তু পুরো অভিজ্ঞতার কথা বললে, এটা নিঃসন্দেহে ২০২৫ সালের অন্যতম সেরা বাংলা সিনেমা।
✅ উপসংহার
“তাণ্ডব” এমন একটি সিনেমা যা একদিকে যেমন দর্শককে বিনোদন দেয়, তেমনি সমাজের প্রতি একটা বার্তাও পৌঁছে দেয়। শাকিব খানের দুর্দান্ত অভিনয়, শক্তিশালী চিত্রনাট্য এবং অসাধারণ নির্মাণশৈলী মিলে এই সিনেমাটি দীর্ঘদিন মনে রাখার মতো একটি কাজ হয়ে দাঁড়াবে।
আপনি যদি এখনো না দেখে থাকেন, তাহলে বলবো—যত দ্রুত সম্ভব সিনেমা হলে গিয়ে “তাণ্ডব” দেখে ফেলুন। কারণ এটা শুধুই একটা মুভি নয়, এটা একেকটা আবেগের বিস্ফোরণ!